মোঃ সোহেল রানা,জেলা সংবাদদাতাঃ
চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের অন্যতম বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শাহ নেয়ামতুল্লাহ কলেজের বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের বৈধতা ও নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধের আবেদন করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ বিজ্ঞ আদালতে মামলা হয়েছে। রবিবার (৪ এপ্রিল) চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে মামলাটি দায়ের করেন শিক্ষানুরাগী শাহনেয়ামতুল্লাহ কলেজের শিক্ষার্থী অভিভাবক মো. গোলাম মোস্তফা।

মামলাটি গ্রহণ করে কলেজের সকল প্রকার নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ এবং অবৈধভাবে কমিটি গঠনের বিষয় জানতে চেয়ে শোকজ আদেশ দিয়েছেন বিজ্ঞ আদালত। নোটিশ প্রাপ্তির ৫ দিনের মধ্যে কমিটিকে শোকজের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

মামলায় বিবাদী করা হয়েছে-শাহ্ নেয়ামতুল্লাহ কলেজের বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মো. সাইদুর রহমান, সদস্য সচিব-মো. শরিফুল ইসলাম (ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ), বিদ্যোৎসাহী সদস্য-প্রফেসর সুলতানা রাজিয়া, মেসবাহুল সাকের জ্যোতি ও মো. বাবর আলী, দাতা সদস্য-মো. হাসিব হোসেন, হিতৈষী সদস্য-মো. কামরুল আরেফিন বুলু, কো-অপট সদস্য-ডা. মো. দুরুল হোদা, অভিভাবক সদস্য ডা. গোলাম রাব্বানী, মো. গোলাম কিবরিয়া কোয়েল মিয়া ও মনোয়ারুল ইসলাম, শিক্ষক প্রতিনিধি-মো. কামরুজ্জামান, মোসাঃ মাসুমা হক ও মো. শাহজামাল, মামলানম্বর-৭৯/২০২১অঃপ্রঃ,তারিখ-০৪/০৪/২০২১ইং।

মামলা গ্রহণ শেষে বিজ্ঞ আদালতের বিচারক-প্রতিষ্ঠানের সকল প্রকার নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ এবং কমিটিকে ৫ দিনের শোকজ আদেশ দিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন মামলার আইনজীবী এ্যাড. সৈয়দ তৌহিদুজ্জামান।

মামলার বিবরণে জানা গেছে, শাহ নেয়ামতুল্লাহ কলেজের বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মো. সাইদুর রহমান ইতিপূর্বে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সাধারণ পাঠাগারের ১৯৯৩-৯৪ সালে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসক (চাঁপাইনবাবগঞ্জ সাধারণ পাঠাগারের সভাপতি) এর স্বাক্ষর জাল করে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং পরবর্তীতে স্বাক্ষর জাল এর বিষয়টি তদন্ত কমিটির কাছে প্রমান হয়। বালুগ্রাম আদর্শ কলেজে মঅধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ২ জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলে মোটা অংকের অর্থ বানিজ্য করার ষড়যন্ত্র করে এবং অর্থ না দেয়ায় ষড়যন্ত্র করে ২ জনের চাকুরী থেকে বরখাস্ত করে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ভুল তথ্য দিয়ে। তৎকালিন সময়ে চাকুরী ফিরে পেলেও আবারও ষড়যন্ত্র করে যোগদানের চিঠি গোপন করে বালুগ্রাম কলেজের শিক্ষককে চাকুরী থেকে বিতাড়িত করেন সে সময়ের অধ্যক্ষ মো. সাইদুর রহমান।

অন্যদিকে, বিধি মোতাবেক কমিটি গঠন না করে আবারও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে অবৈধ প্রক্রিয়ায় গঠিত কমিটি অনুমোদন করানো হয়েছে। বিগত প্রতিষ্ঠানগুলোতে দায়িত্ব পালনকালে আর্থিক স্বচ্ছতা না থাকায় সম্প্রতি ১৯ মার্চ/২১ প্রতিষ্ঠানে কয়েকটি পদে নিয়োগ দেয়ার জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে এবং নিয়োগ বাণিজ্য করার একটি ক্ষেত্র তৈরী করেছেন মর্মে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে। কমিটির বিদ্যোৎসাহী সদস্য প্রফেসর সুলতানা রাজিয়া নবাবগঞ্জ সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ২০১৫ সালে

শাহ্ নেয়ামতুল্লাহ কলেজের শিক্ষক নিয়োগ কমিটির ডিজি প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে বর্তমান সভাপতির যোগসাজসে শাহ্ নেয়ামতুল্লাহ কলেজের প্রয়াত অধ্যক্ষ মো. আনোয়ারুল ইসলামের ছোট ভাই খাইরুল ইসলাম (বাবু)কে (অনার্স বিভাগের রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিষয়ের প্রভাষক) নিয়োগের স্বপক্ষে প্রয়োজনীয় বৈধ কাজপত্র না থাকা স্বত্বেও নিয়োগ চুড়ান্ত করে অনুমোদন দেন। পরবর্তীতে কলেজের প্রয়াত অধ্যক্ষ মো. আনোয়ারুল ইসলামের স্বজনপ্রীতি, অর্থ আত্মসাৎ, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের উপর আর্থিক ও মানষিক নির্যাতন, নিয়োগ বানিজ্য, নিজ ছেলেসহ পরিবারের কয়েকজন সদস্যকে অবৈধভাবে নিয়োগ দেয়াসহ বিভিন্ন অনিয়মের প্রতিবেদন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশের পর গত ১৮/০৭/২০১৯ তারিখে বাংলাদেশ দূর্ণীতি দমন কমিশনে অভিযোগ দায়ের হলে বিষয়টি নিয়ে সরজমিন তদন্ত শেষে অনিয়ম ও দূর্ণীতির বিষয়টির সত্যতা প্রমানিত হয়।

প্রেক্ষিতে খাইরুল ইসলামের নিয়োগ অবৈধ প্রমান হলে কলেজ ছেড়ে পালিয়ে যায় খাইরুল ইসলাম। নিয়োগ অবৈধ হওয়ায় খাইরুল ইসলাম বাবুর সহধর্মীনি মোসা. সেলিনা খাতুন (বাংলা বিষয়ের প্রভাষক অনার্স শাখা)ও চাকুরী ছেড়ে পালিয়ে যায়।

এছাড়াও জানা গেছে, বালুগ্রাম আদর্শ কলেজ থেকে অবসর গ্রহণের পর বর্তমান অধ্যক্ষ মো. মতিউর রহমানকে বিভিন্নভাবে দাপ্তরিক ও প্রাতিষ্ঠানিক হয়রানী করেন অব. অধ্যক্ষ মো. সাইদুর রহমান-বলে জানিয়েছেন অধ্যক্ষ মতিউর রহমান। তিনি অভিযোগ করে বলেন, প্রতিষ্ঠানের কোন উপকারের জন্য নয়, তাঁর নিজ স্বার্থ পুরণের জন্যই তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নেতৃত্ব দিতে চান। শাহনেয়ামতুল্লাহ কলেজের সভাপতি হওয়ার পেছনে তাঁর এরকমই কোন একটা স্বার্থ জড়িয়ে আছে।

উল্লেখ্য, শাহনেয়ামতুল্লাহ কলেজের প্রয়াত অধ্যক্ষ আনোয়ারুল ইসলামের বিরুদ্ধে নানা দূর্ণীতি-অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতাসহ প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন অনিয়মের প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে বর্তমান কমিটিতে থাকা কয়েকজন সদস্য দূর্ণীতিবাজ অধ্যক্ষের পক্ষ নিয়ে তাঁকে সহযোগিতা করেন। প্রয়াত অধ্যক্ষের সকল অনিয়মের স্বাক্ষী এবং তাঁর অন্যতম একজন বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. শরিফুল আলম। বর্তমানে অধ্যক্ষ পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার জন্য বিতর্তিক ব্যক্তি মো. সাইদুর রহমানকে সভাপতি মনোনয়ন নিতে সকল প্রকার সহযোগিতা এবং নিজস্ব লোকজন দিয়ে অবৈধ প্রক্রিয়ায় বর্তমান কমিটি গঠনে সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে বিভিন্নজনের।

মামলার বিষয়বস্তু নিয়ে শাহনেয়ামতুল্লাহ কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. শরিফুল আলমের সাথে মঙ্গলবার দুপুরে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, মামলার বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। আদালত থেকে এখন পর্যন্ত কোন চিঠিপত্র পাওয়া যায়নি। বর্তমান কমিটি গঠন ও সভাপতি মনোনয়ন এবং সভাপতির কর্মকান্ড নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের ভিসি মহোদয়ে’র সাথে খুব ভালো সম্পর্ক থাকায় তিনি সবকিছু করিয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে অনেক বিতর্কের বিষয় থাকলেও তাঁকে সভাপতি মনোনয় দেওয়া হয়েছে।